নারী শহরের সম্পদ (Treasure of the city of ladies)


https://www.facebook.com/share/p/DuzjeUZhqwWm3BXs/




২০১৯ সালের এপ্রিল মাস। নীস শহর তখন আমার কাছে নতুন; যেদিকেই যাই ফরাসী নন্দন-তত্ত্বের নিদর্শন আমায় মুগ্ধ করে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়,
“The idea of aesthetics is to distort pure geometric shapes for purely emotional impact!”
এমন মানুষের জার্মানি ছেড়ে এসে যে এ দেশ ভালো লাগবেই- এতে আর আশ্চর্যের কি আছে? সবে মাসখানেক হল সমুদ্রের এক্কেবারে গা ঘেষে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া পেয়েছি। জীবনের প্রথম পাকাপোক্ত চাকরি, সেই প্রথম দুজনের  খানিকটা স্বচ্ছল যাপন, তার উপর দক্ষিণ ফ্রান্সের এই স্বর্গ। কাজেই যা দেখি তাই মনে নয় এর মতন আর কোথাও কিছু নেই। রাস্তাঘাট তেমন চিনি না, শুধু জানি যেখানেই যাই না কেন সমুদ্র পাড়ের 'প্রোমেনাদ' ধরে এয়ারপোর্টের দিকে মিনিট চল্লিশ হাটলেই বাড়ি পৌছে যাওয়া যাবে। এমনই এক শনিবার নিজের মনেই ক্যামেরা হাতে ঘুরতে ঘুরতে কখন যে পুরনো শহরের অলিগলি ছাড়িয়ে আবার একটা বড় রাস্তায় এসে পড়েছি তা খেয়াল হয়নি। রাস্তাটার একদিকে বেশ কিছু দোকান, অন্য পারে একটা লম্বা লাল পাঁচিলের মাঝ বরাবর মাঝে-মাঝেই সিড়ি উঠে গেছে। জায়গাটা দিব্যি দেখতে! এক প্রেমরত যুগলকে খানিকটা বিরক্ত করেই জানতে চাইলাম, এটা কোন জায়গা। ওনারা জানালেন এই পাঁচিল ধরে পিছন দিকে এগিয়ে মোড় ঘুরলেই বাঁ হাতে “মিউজিয়াম অফ কন্টেম্পোরারি আর্টস” আর উলটো ফুটে “Bibliothèque Louis Nucéra”- অর্থাৎ নীসের প্রধান মিউনিসিপাল লাইব্রেরিগুলির একটি। সেই শুরু! সেদিন যে 'মেধা-আবৃত' যন্তরমন্তরে মনের খেয়ালেই হঠাৎই আটকে পড়েছিলাম, আজ এই তৃতীয় বছরের শেষে দাঁড়িয়েও তার অলিগলি আমার মননকে সমান সমৃদ্ধি উপহার দেয়।
সেই নুসেরা লাইব্রেরিতেই আমি প্রথম Liliane GIRAUDON ও Henri DELUY  সম্পাদিত  Poesies en France depuis 1960: 29 femmes Une Anthologie বইটার দেখা পাই। লাইব্রেরির কবিতা কক্ষের (হ্যা কক্ষ বলাই ঠিক হবে) অন্দরমহলে ইতিহাসাবৃত মহীরুহদের ভিতর লুকিয়ে ছিল প্রায় অজানা এই সম্পদ, পৃথিবীর সর্বত্রই যেমন হয় আরকি। সে কারণেই ছোটো পত্রিকার মতই ছোটো প্রকাশনীগুলোর আজও এত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিষয় হিসাবে ভাবতে গেলে, এ বই আমার কাছে মিস্টি মাউন্টেইনের কক্ষে বিলবোর হাতে হঠাৎই চলে আসা আর্কেন-পাথরের মতই অমূল্য। তার কারণটা এখানে ছোটো করে বলা প্রয়োজন।
প্রথমত আমার কাছে কবিতা চিরকালই শুধুমাত্র ফর্ম বা সাহিত্য-গঠনের উর্ধে এক রজনৈতিক ও সামাজিক স্বগোতক্তি হয়েই ধরা দিয়েছে। সঞ্জয়দার (মুখোপাধ্যায়) শব্দ ধার করে বললে, মুগ্ধ অবলোকন নয় হিংস্রতার নন্দনতত্ত্বই আমার কাছে কবিতা। তেমন কবিতা লিখতে পারিনা ঠিকই তবে পড়া আটকায় কে? দ্বিতীয়ত আমার ব্যক্তিগত মতে, বর্তমান উত্তরাধুনিক যুগে লিঙ্গকে বাদ রেখে রাজনৈতিক শ্রেণীকে সংজ্ঞায়িত করতে যাওয়ায় একটা আপাত মূর্খামি আছে। এই দুই মিলে মিশে ১৯৬০ পরবর্তী ফরাসী মহিলা কবিদের প্রতি আমার এই আগ্রহ। পনেরোশো শতাব্দীর ক্রিস্টিন দে পিজান, সতেরোশো শতাব্দীর আনে ব্র‍্যাডস্ট্রীট অথবা ১৭৯২ সালে মারি ওলস্টোনক্রাফট বিরচিত “আ ভিণ্ডিকেশান অফ দি রাইটস অফ ওম্যান” এর অনুপ্রেরণায় অঙ্কুরিত নারীবাদের প্রথম তরঙ্গ ১৯২০ সালে, তৎকালীন মার্কিন নারীকে এনে দিয়েছিল গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার। কিন্তু তার ৩ দশক পরেও আন্তর্জাতিক কীর্তিবাস নারীর পক্ষ্যে সাহিত্যে, এবং মূলত পুরুষ শাসিত কবিতার জগতে স্বাধীন যাপন ছিল প্রায় অসাধ্য। ১৯৪৯ সালে সিমন দি বাভোয়া রচিত “দি সেকণ্ড সেক্স” সেই বাঁধে চিড় ধরায়, এবং ফ্রান্সে শুরু হয় নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গের উদযাপন। ১৯৫৩ সালে “দি সেকণ্ড সেক্স” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইংরেজিতে ভাষান্তরিত হয়। ১৯৬৩ সালে বেট্টি ফ্রিডান লেখেন “দা ফেমিনিন মিসটিক”। এরপর অবশ্য ফরাসী কবিতার আঙিনায় মহিলা কবিদের আরে পিছনের সারিতে বদ্ধ থাকতে হয়নি। কেবল নারীবাদি রাজনীতির বিভিন্ন আঙ্গিক, আবেগ বা ধারাই নয় সে সমস্ত কবিদের কলমে উঠে এসেছে এক সম্পূর্ণ আধুনিক মানবিক যাপন, যেখানে প্রেম, ভালবাসা, অভিমান বা রাগের মত অনুভুতির সাথে সাথেই ধরা পড়ে সুররিয়ালিজম, টাওইজম, অথবা মার্ক্সবাদের দার্শনিক তত্ত্ব। সিমন যেমন বলেছেন “জেণ্ডার ইজ সোশাল”। সে কারণেই বইটা হাতে আসার পর ঠিক করি এ বইয়ের কিছু কবিতা নিজের মত করে অনুবাদ করবো। হাজার হোক নতুন ভাষার সাহিত্যকে নিজের ভাষার পেডেস্টালে না মাপলে তার ওজন বুঝবো কেমন করে?
সমস্যা অন্যজায়গায়- সময়। নিজের বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজ সামলে নারীবাদ পরবর্তী কবিতার ইতিহাস আয়ত্তে এনে তারপর সঠিক কাজগুলিকে অনুবাদ করতে যা সময় প্রয়োজন তাতে পরবর্তী একদশকে সে কাজ সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কাজেই এক বা একাধিক অভিভাবকের প্রয়োজন। আমার সৌভাগ্য, Writing the Real: A Bilingual Anthology of Contemporary French Poetry, বইটির দৌলতে ব্রিটেনবাসী অধ্যাপক নিনা পারিশ (Professor of Literature and Languages, University of Stirling) ও পরবর্তীকালে অধ্যাপক সান্ড্রা ডারোকজি-র (Lecturer of Politics, Languages & International Studies, University of Bath) সাথে আমার যোগাযোগ ঘটে। নিনা ও সান্ড্রার অফুরন্ত সহযোগিতা ও উৎসাহ না থাকলে যে এ বইয়ের একটি লেখাও দাঁড়াতো সে কথা বলতে আমার বড়ই আনন্দ হচ্ছে। ফরাসী মহিলা কবিদের ইতিহাস থেকে শুরু করে, বিভিন্ন রাজনৈতিক পত্রপত্রিকায় হারিয়ে যেতে বসা নাম না জানা কবিদের তর্জমায় সাহায্য  এবং সর্বোপরি আমার বেসামাল ভাষাজ্ঞানের তরীকে তীরে পৌছে দেওয়ার কঠিন কাজটার প্রায় সম্পূর্ণ কৃতিত্বই ওদের প্রাপ্য। তাই এ কাজে ভূলভ্রান্তি খুঁজে পেলে গুরুজনেরা নিজ গুণে ক্ষমা করবেন সে আশাই করবো। সাহিত্যগুণে নয়, বরঞ্চ রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক দিক থেকেই মূলত এই কাজকে আমি গুরুত্ব দিয়ে এসেছি। 
আমার সমস্ত লেখার প্রথম পাঠক:মা এবং সারা সপ্তাহের কাজের শেষেও তার জন্য বরাদ্দ সময়ে সাহিত্যের অনুপ্রবেশকে অভিমান ভুলে আশকারা দিয়ে চলা: শারদীয়া ছাড়াও হ্যালো টেসটিং বাংলা কবিতার যুগ্ম সম্পাদক কুবলয় (বসু) ও রাজদীপদা (পুরী) সম্বন্ধে যা বলতে চাইবো তাই ন্যূনোক্তি হবে। আমার মত অর্বাচীনের কাজকে যে এই সময়ের বাংলা কবিতার বিশিষ্টতম ওয়েবম্যাগাজিন জায়গা দেওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করেছে সে আমার কাছে এক বিরাট প্রাপ্তি। বিগত দুইবছরে যারা বাংলা কবিতাকে আরো অনেকখানি আধুনিকা করলেন তাদের সাথে এ-পথ চলায় আমার মননও আরো খানিকটা সমৃদ্ধ হল। এছাড়া কবি সুবোধ সরকার সম্পাদিত ভাষানগর পত্রিকাকেও আমার আন্তরিক শ্রদ্ধার্ঘ। এ কাজের প্রথম অনুবাদ (নাথালী কীন্টান) ভাষানগরের ওয়েবসাইটেই প্রকাশিত হয়। এরপর নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় থেকে তার পরবর্তী পঞ্চাশ বছরের বিশিষ্ট ফরাসী মহিলা কবিদের এক গুচ্ছ জানা অজানা কবিতাকে বাঙালী পাঠক-মননে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই 'নারী শহরের সম্পদ' ধারাবাহিকটি হ্যালো টেসটিং-এর পাতায় বিগত এক বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে এসেছে। ধারাবাহিকে একে একে যেমন উঠে এসেছেন সিলভিয়া ব্যারন সুপারভিয়েল, মারী-ক্লেয়ার বাংকার্ট, মার্টিনে ব্রোদা ইত্যাদির মত মহারথীরা তেমনই ভাষান্তরিত হয়েছেন দ্বিতীয় তরঙ্গের নাম না জানা রাজনৈতিক বেশ কিছু কবি। এই অনুসঙ্গই ” নারী শহরের সম্পদ”, যেখানে নামটি নিজেই ক্রিস্টিন ডে পিজানের বই “The Treasure of the City of Ladies”এরই অনুপ্রেরণার অনুদান।
উপরুক্ত পরিচ্ছেদগুলোয় যে অজ্ঞানের জ্ঞান বর্ষণ করলাম সে দোষের শুদ্ধিকরণ হিসাবেই এ বইয়ে প্রাকাশিত অনুবাদগুলিকে আপামর বাঙালী পাঠকের করকমলে নিবেদন করলাম। এই ক্ষুদ্র বইখানায় যা প্রকাশিত হল তা এক বিরাট হিমশৈলের ডগা মাত্র- কাজটির হাত ধরে যদি সে খখননকার্য  আবারও শুরু করা যায় তবে সে হবে এক বিরাট পাওয়া। লেখাগুলোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব সমসাময়িক লিঙ্গ রাজনীতির ধারা এবং তার সাথে একাত্মে থাকা কবিতার নন্দন্তত্ত্ব আপনাদের মননে স্বল্পক্ষণের জন্যে হলেও আবারও একটা অনুরণন ঘটাবে সে আশাই রাখি।

নাথালী কিন্টান

Bhashanagar: Nathalie Quintane

Interview:


মারী ক্লেয়ার ব্যাংকার্ট

HelloTestingBanglaKobita: Marie Claire Bancquart

মার্টিনে ব্রোডা

HelloTestingBanglaKobita: Nari Shohorer Sompod 1

আন্দ্রেই শেডিড

HelloTestingBanglaKobita: Nari Shohorer Sompod 2

ক্লেয়ার মালরু

HelloTestingBanglaKobita: Nari Shohorer Sompod 3

এম-এল-এফ আন্দোলন, লূ টর্চন ব্রূল পত্রিকা

HelloTestingBanglaKobita: Nari Shohorer Sompod 4

এসথেয়ার তেলেরমান্ন

HelloTestingBanglaKobita: Nari Shohorer Sompod 5

হেলেন কাদো

HelloTestingBanglaKobita: Nari Shohorer Sompod 6

সিলভিয়া বারন সুপেরভিয়েল

HellotestingBanglaKobita: Nari Shohorer Sompod 7

মারি এতিয়েন

HelloTestingBanglaKobita: Nari Shohorer Sompod 8

মোনিক উইটিগ (Monique Wittig) ও লে গেহ্রিয়ের (Les Guérillères)

HelloTestingBanglaKobita: Nari Shohorer Sompod 9